প্রশাসন ক্যাডারদের সীমাহীন কর্তৃত্বে সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য চরমে : অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ

 প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৯ অপরাহ্ন   |   ভিন্ন খবর

প্রশাসন ক্যাডারদের সীমাহীন কর্তৃত্বে সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য চরমে : অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সীমাহীন কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাবে সিভিল সার্ভিসের অভ্যন্তরে তীব্র বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাকি ২৫ ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা। ‘বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ’-এর ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক কৃষিবিদ আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল বলেন, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সীমাহীন কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব সিভিল সার্ভিসের অভ্যন্তরে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে এবং এটি গণমুখী, সেবাধর্মী, জনবান্ধব জনপ্রশাসন গড়ে তোলার প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। এ আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশসমূহ নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করতে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছি।তিনি বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশকে আড়াল করে, অত্যন্ত কম গুরুত্বপূর্ণ ও অযৌক্তিক কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই সনদকে দুর্বল করা হয়েছে। এর একটি হলো- সিভিল সার্ভিসে নিয়োগের জন্য তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন। সরকারি কর্ম কমিশন (সাধারণ); সরকারি কর্ম কমিশন (শিক্ষা) ও সরকারি কর্মকমিশন (স্বাস্থ্য)। অপরটি হলো- হিসাব বিভাগ থেকে নিরীক্ষা বিভাগ আলাদাকরণ। যদি হিসাব বিভাগকে নিরীক্ষা বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়, তবে প্রি-অডিট কার্যক্রম বিলুপ্ত হবে, যা আর্থিক জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করবে।


কৃষিবিদ আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল বলেন, মেধাভিত্তিক একটি সিভিল সার্ভিস গঠনে উপসচিব পদে কোটা বাতিল করে সব ক্যাডার থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে অনেকেই। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পর্যায়ের মোট পদের প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পদ রাখার সুপারিশ করেছে, যা জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘার্ষিক। জুলাই সনদেও এ বিষয়ের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিতেও প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের বঞ্চনা লাঘবের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত ও প্রয়াত মিলে প্রায় ৭৭৮ জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তাদের পদোন্নতির আদেশে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির ক্রম উল্লেখ এবং বেতন ভাতাসহ সব আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে অন্যান্য ক্যাডারের পক্ষ থেকে দাবি উত্থাপন করা হলে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়। প্রাপ্ত আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে ২৫টি ক্যাডারের বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত মাত্র ৭২ জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়। কৃষিবিদ আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের নামে প্রকৃতপক্ষে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা কোনো কারণ ছাড়াই বাদ পড়ে যান। অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির আদেশেও বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আদেশে শুধু বকেয়া মূল বেতন, গ্রাচ্যুইটি এবং পেনশনের জন্য আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ২৫ ক্যাডারের বঞ্চিত সব কর্মকর্তাদের আবেদনগুলো আমরা পুনর্বিবেচনা এবং প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতো ভূতাপেক্ষ বেতন-ভাতাসহ সব আর্থিক সুবিধা দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। যেসব ক্যাডারকে তৃতীয় বা চতুর্থ গ্রেডে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের উচ্চ গ্রেড দেওয়ার মাধ্যমে সমতা নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।


সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি স ম গোলাম কিবরিয়া, ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এবং বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার, বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মাহফুজ আহমেদ, বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এম এ সামাদ প্রমুখ।


ভিন্ন খবর এর আরও খবর: