প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য জাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বিশেষ সুবিধা সম্পন্ন কক্ষ নির্মাণ
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১৭ অপরাহ্ন | শিক্ষা

মাহমুদুল হাসান (জাবি প্রতিনিধি)
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগারে বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন পৃথক দুইটি কক্ষ উদ্ভোধন করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগারের সামনে ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) এর আয়োজনে আলোচনা সভা শেষে সকাল ১১ টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম কেক কেটে বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন কক্ষ দুটির উদ্ভোধন করেন।
ফিজিকালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) এর পক্ষ থেকে এসময় উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। পিডিএফ এর সাংগঠিনিক কার্যক্রমের জন্য অফিস কক্ষ, হলসমূহে নির্দিষ্ট সংখ্যক আসনের ব্যবস্থা; প্রত্যেক অনুষদে যাতায়াতের জন্য র্যাম্পের ব্যবস্থা; পরীক্ষাগুলোতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় দেয়া; ক্যাম্পাসের বাসে অন্তত ৫টি আসন বরাদ্দ রাখা; লাইব্রেরিতে ব্রেইল পদ্ধতির বইয়ের ব্যবস্থা করা; প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা; বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের যোগ্য বিবেচনায় নিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করার দাবী জানান।
পিডিএফ প্রতিবন্ধীদের কি ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে জানতে চাইলে পিডিএফ জাবি ইউনিটের সভাপতি আব্দুল গাফফার বলেন, 'আমরা ভিজুয়ালি ইমপেয়ারড শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রুতিলেখকের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। তাদের জন্য বই রেকর্ড করে দিই। যেসব ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে তাদের আবাসন সুবিধা, খাওয়া দাওয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করে থাকি। ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থা অপ্রতুল হলেও আমরা আস্বস্ত হয়েছি ভিসি মহোদয় আমাদের জন্য একটি অ্যাকসেসিবল ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা করবেন।'
পিডিএফ এর উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, 'আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধীরা অবহেলার স্বীকার। আমাদের সংবিধানে ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জড মানুষদের অধিকার বাস্তবায়নের কথা বলা আছে। আমি আশা করবো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলো প্রতিবন্ধীসহায়ক হবে। এবিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি'
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ মনজুরুল হক বলেন, 'প্রতিবন্ধিরা দেশের বড় অংশ। তাদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরক হেলা না করে সঠিকভাবে পূর্নাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব। তারা যেন আমাদের মত স্বভাবিক জীবনযাপন করতে পারে সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।'
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম বলেন, 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিডিএফ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে কিনা আমার জানা নেই। তারা স্মারকলিপিতে বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে। নবনির্মিত হলে প্রতিবন্ধীদের প্রবেশের সুবিধার জন্য র্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সব প্রশাসনিক আবাসিক ভবনে র্যাম্পের ব্যবস্থা করবো। ক্যম্পাসের বাসে তাদের চলাচলের জন্য পাঁচটি সিটের ব্যাবস্থা করা হবে এবং এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা কামনা করছি।'
তিনি আরও বলেন, 'তাদের জন্য আলাদা বৃত্তির ব্যাবস্থা করলে পরীক্ষার ফি, সেশন ফি ইত্যাদি মওকুফ করার প্রয়োজন হবে না। আমি এবিষটি দেখব। তাদের আসন সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আমি একা নিতে পারবনা, একাডেমিক কাউন্সিল রাজি হলে তাদের ভর্তি পরীক্ষায় আসন সংখ্যা বাড়ানো হবে।'
এসময় অনুভূতি জানতে চাইলে বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী আজাদ বলেন, 'আজকে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। আমাদের জন্য অডিও বই, বেল বই ইত্যাদি ব্যবস্থা করলে অনেক সুবিধা হয়। ভিসি মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই লাইব্রেরিতে আমাদের জন্য আলাদা সেকশন তৈরি করার জন্য।'
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. এ. এ. মামুন, আনন্দশালার পরিচালক প্রফেসর হানিফ আলীসহ প্রমুখ।
বিশেষ পাঠকক্ষে শিক্ষার্থীরা যেসব সুযোগ সুবিধা পাবে তার মধ্যে অন্যতম হল ব্রেইল ডিসপ্লে। এর মাধ্যমে তারা ডিসপ্লেতে হাত রেখে বই পড়তে পারবে। এছাড়াও রয়েছে ব্রেইল প্রিন্টার এবং ব্রেইল টাইপ-রাইটার ব্যবস্থা যা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র সংগ্রহ ও নোট করতে সহয়তা করবে।
এছাড়াও বিশেষ এই পাঠকক্ষে রয়েছে নিয়মিত কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ পাবে। এছাড়াও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেইনারের ব্যবস্থাও রয়েছে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ এই পাঠকক্ষটিতে প্রায় নব্বই লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি বিশেষ ব্রেইল ডিসপ্লে সংযোজন করা হবে। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রায় ৩৬ হাজার বই পড়ার সুযোগ পাবে। এছাড়াও কক্ষটি রক্ষনাবেক্ষনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা যায়।