সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল : ১৫ বিভাগে সেবা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা

 প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩, ১২:৪৪ অপরাহ্ন   |   জাতীয়

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল : ১৫ বিভাগে সেবা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা

দেশে মানসম্পন্ন চিকিৎসার ঘাটতি মেটাতে বানানো হয়েছে বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। ২০১৬ সালে শুরু হয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তায় ২০২২ সালে শেষ হয় নির্মাণ কাজ। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটির উদ্বোধন করা হয়। সে সময় সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় একটি নতুন যুগের সূচনা হবে। রোগীরা দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা পাবেন। চিকিৎসার প্রয়োজনে দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।


তবে হাসপাতালটি উদ্বোধনের সাড়ে ৬ মাস পরও কেবল আউটডোরে রোগী দেখা ছাড়া অন্য কোনো সেবা পুরোপুরি চালু হয়নি। রেডিওলোজি অ্যান্ড ইমেজিং, এমআরআই, সিটি স্ক্যানের মতো প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা চালু হলেও অন্য বিশেষায়িত সেবা চালু হয়নি এখনো।



সংশ্লিষ্টরা এখন বলছেন, হাসপাতাল বুঝে নেওয়ার জন্য যেসব জনবল দরকার ছিল তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। অল্প সময়ের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে।


হাসপাতালের তথ্যমতে, এই বিশেষায়িত হাসপাতালে সেবা দেওয়ার জন্য ১৫৭ জন মেডিকেল অফিসার এবং ১৩৯ জন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক প্রয়োজন। এটি প্রকল্পে উল্লেখ থাকলেও এখনো নিয়োগ হয়নি। এছাড়া ১ হাজার ৫০৬ জন নার্স, টেকনিশিয়ান, তথ্য প্রযুক্তিবিদ ও কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রয়োজন হলেও এর মধ্যে নিয়োগ হয়েছে মাত্র ১৪৪ জনের।






এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন  বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এই হাসপাতাল চালু করার। এরই মধ্যে ১৫টি বিভাগের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ গ্রহণ চালু হয়েছে। এর সঙ্গে রেডিওলোজি অ্যান্ড ইমেজিং, এমআরআই, সিটি স্ক্যান, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, মেমোগ্রাম ও ফ্লুরোস্কোপি পরীক্ষা চালু করেছি। এই বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্সি সেবা আরও বাড়াবো। একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব ইনডোর সেবাও চালু করবো।


জনবলের বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। যেসব লোকবল আমাদের এই হাসপাতাল বুঝে নেওয়ার জন্য দরকার ছিল, তা আমরা নিয়োগ দিয়েছি। আর অন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান আছে। আমরা আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবো।


হাসপাতালের সেবা চালু না হলেও চিকিৎসকদের পরামর্শ সেবা পেয়ে খুশি রোগীরা। সরেজমিনে হাসপাতালে দেখা যায়, তিনটি তলায় হাসপাতালের কার্যক্রম অনেকটা দৃশ্যমান। ডাক্তারের রুমের সামনে অপেক্ষারত রোগী। ডায়াগনস্টিক সেবা নিতেও উপস্থিতি অনেকে। রোগীর স্বজনরা অপেক্ষা করছেন লবিতে।



অনেকদিন লিভারের সমস্যায় ভুগছেন হুমায়ুন কবীর। সাভার থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছেন। ঝামেলামুক্ত পরিবেশে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পেরে তিনি খুশি। তার মতে, এভাবে চিকিৎসা চলমান থাকলে এই হাসপাতাল বাংলাদেশের অনেক বড় পাওয়া হবে।


হাড়ের সমস্যা নিয়ে এসেছেন আইনুন নাহার। তিনি থাকেন কুমিল্লায়।  তিনি জানান, এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর। ৬০০ টাকা দিয়ে দেখিয়েছি একজন অধ্যাপককে। অন্য জায়গায় যে ভোগান্তি সে হিসেবে এটা বেশি না। এমআরআই করানো হবে। তবে কিছু পরীক্ষা এখনো চালু হয়নি। শুরু হলে আর কোথাও যাওয়া লাগতো না, এখানেই সব সেবা নিতে পারতাম।



এই হাসপাতালে রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ সেবা চালু করা হলেও একাধারে এই বিশেষজ্ঞরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও বিএসএমএমইউ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা, অপারেশন হতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গেই তারা জড়িত থাকেন। এসব কাজ বন্ধ না করেই শিফট ভিত্তিতে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে রোগী দেখবেন তারা। এতে করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের জন্য শিফট ভাগ করে দিয়েছেন। দেখা যায় সকাল ও বিকেলের শিফটের যেকোনো একটিতে থাকেন তারা। তাও দেখা যায় সপ্তাহে একবার। এতে করে অন্য কাজে তাদের ব্যাঘাত ঘটে না।



হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালকে ভাগ করা হয়েছে পাঁচটি কেন্দ্রে। সেগুলো হচ্ছে জরুরি চিকিৎসা ও ট্রমা কেন্দ্র, কিডনি রোগ ও প্রতিস্থাপন কেন্দ্র, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ ও স্ট্রোক কেন্দ্র এবং হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়াটিস, হেপাটোলজি ও যকৃত প্রতিস্থাপন কেন্দ্র। বর্তমানে এই পাঁচটি কেন্দ্রের আওতায় ১৫টি বহির্বিভাগ চালু হয়েছে।


এরমধ্যে আছে প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ, শিশু স্বাস্থ্য, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি, রেসপিরেটরি মেডিসিন, হৃদরোগ, কার্ডিয়াক সার্জারি, নিউরোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, হেপাটোলজি, হেপাটোবিলিয়ারি ও প্যানক্রিয়াটিস, অর্থপেডিকস ও ট্রমা, চক্ষুরোগ, সার্জিক্যাল অনকোলজি এবং নিউরোসার্জারি।


কনসালটেন্সি ফি-এর বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ একটি নির্দিষ্ট ফি-এর মাধ্যমে দেওয়া হয়। রোগীরা সকালের স্লটে সকাল (১০টা থেকে ১টা) অধ্যাপক ৬০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপক ৪০০ টাকা ও সহকারী অধ্যাপকের কাছে ৩০০ টাকায় পরামর্শ নিতে পারছেন। বিকেলের স্লটে (৩টা থেকে ৬টা) অধ্যাপক এক হাজার টাকা, সহযোগী অধ্যাপক ৭০০ টাকা ও সহকারী অধ্যাপকরা ৫০০ টাকায় সেবা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এই ৬০ শতাংশ পাবেন চিকিৎসক। বাকি ৪০ শতাংশ জমা হবে হাসপাতালের তহবিলে। এই হাসপাতাল পুরোদমে চালুর পর রোগীদের খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিএসএমইউ-এর মতো ফি রেখেছি। কিছু বাড়ানো হয়নি। তবে সার্ভিস চার্জের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছিলেন বিএসএমএমইউ’র সহকারী অধ্যাপক ডা. কার্তিক চন্দ্র ঘোষ। ধীরে এবং রোগীদের পর্যাপ্ত সময় দিয়ে দেওয়া হচ্ছিল পরামর্শ।


তিনি বলেন, এই হাসপাতালের মাধ্যমে রোগীরা অনেক বেশি উপকৃত হবে। এখানে ঘণ্টায় ৬ জন রোগী দেখার যে ব্যবস্থা চালু হয়েছে তাতে চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে সন্তুষ্ট, রোগীরাও সন্তুষ্ট হবেন। এখানে সময় নির্ধারণ করে দেওয়ায় রোগীদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সময় পাওয়া যাবে। বিএসএমএমইউতে সব মিলিয়ে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা সময় দেওয়া সম্ভব হয় না।


জনবল নিয়োগ না হওয়া ছাড়াও এখনো কিছু সংকট রয়েছে হাসপাতালে। হাসপাতালে মেডিকেল গ্যাস বা অক্সিজেন সরবরাহ এখনো শুরু হয়নি। তবে জুন-জুলাইয়ে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তিসহ পুরোপুরি চালুর আশা করছেন তারা।



এ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে ১৩টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। ১০০ শয্যার আইসিইউ ও জরুরি বিভাগে রয়েছে ১০০ শয্যা। ভিভিআইপি কেবিন ৬টি, ভিআইপি কেবিন ২২টি এবং ডিলাক্স ২৫টি। সেন্টারভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থাপন করা হচ্ছে ৮টি করে শয্যা।


এছাড়া এই হাসপাতালে সেবা নিতে এসে গ্রাহককে অন্য কোনো জায়গায় যেতে হবে না। কারণ হাসপাতালের ভিতরেই থাকবে একটি কনভেনিয়েন্স শপ, ব্যাংকিং সুবিধা, ফার্মেসি, ৩৫০ সিট বিশিষ্ট উন্নত কিচেন যার আওতায় ৩টি ক্যাফেটেরিয়া থাকবে। ৯০ সিট বিশিষ্ট ডক্টরস ক্যাফেটেরিয়া, লন্ড্রি হাউজসহ কার পার্কিংয়ের সুবিধা।



জাতীয় এর আরও খবর: